বর্তমান সমাজে ধর্ষণের সংজ্ঞা নিয়ে নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে। আইনের দৃষ্টিতে ধর্ষণ একটি গুরুতর অপরাধ, যেখানে বলপ্রয়োগ, ভয়ভীতি বা জবরদস্তির মাধ্যমে কারও সম্মতি ছাড়াই শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই পারস্পরিক সম্মতিসূচক সম্পর্ককে জোরপূর্বক ধর্ষণের সঙ্গে এক পাল্লায় মাপা হচ্ছে, যা আইনের অপব্যবহার ও ন্যায়বিচারের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, স্বেচ্ছায় গঠিত শারীরিক সম্পর্ককে ধর্ষণ বলা কতটা যৌক্তিক? যদি দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি সম্মতির ভিত্তিতে সম্পর্ক স্থাপন করেন, তাহলে সেটি ‘ধর্ষণ’ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত নয়। বরং এটি সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ‘জিনা’ বা অনৈতিক সম্পর্কের মধ্যে পড়তে পারে। এই পার্থক্যটুকু স্পষ্ট করা প্রয়োজন, যাতে প্রকৃত ধর্ষণের শিকার নারীরা ন্যায়বিচার পান এবং অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করে।
তবে এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, সম্মতি মানেই কি ন্যায়সঙ্গত? অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বয়স, পরিস্থিতি বা মানসিক চাপের কারণে কাউকে সম্মতি দিতে বাধ্য করা হয়। অর্থাৎ, এক ধরনের সূক্ষ্ম চাপ প্রয়োগ করে সম্পর্ক স্থাপন করা হয়, যেখানে ভুক্তভোগীর আসলেই কোনো বিকল্প থাকে না। ফলে, শুধুমাত্র ‘সম্মতি’ শব্দটি ব্যবহার করে অপরাধ লঘু করার চেষ্টা করলে সেটিও সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
অন্যদিকে, ধর্ষণের অভিযোগের অপব্যবহার নিয়েও আলোচনা হওয়া দরকার। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিশোধ, ব্যক্তিগত স্বার্থ বা সামাজিক মান-সম্মান রক্ষার জন্য মিথ্যা ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়, যা প্রকৃত ভুক্তভোগীদের জন্য বিচার পাওয়ার পথ কঠিন করে তোলে।
ধর্ষণ ও স্বেচ্ছাসম্মত সম্পর্কের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট করতে হলে সমাজ, আইন ও নৈতিকতার একটি যৌক্তিক সমন্বয় প্রয়োজন। কেবল সংজ্ঞা বদলালে সমস্যার সমাধান হবে না, বরং বিচার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে হবে, যাতে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হন এবং প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি এড়াতে না পারেন। ধর্ষণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা উচিত কি না, সে বিষয়ে সমাজে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আইন যেন নিরপেক্ষ, বাস্তবসম্মত ও মানবিক হয়। ধর্ষণের প্রকৃত শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে, একই সঙ্গে যেন কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি মিথ্যা মামলার শিকার না হন, সেটিও নিশ্চিত করা জরুরি।
এমনকি এই সংবেদনশীল বিষয়ে আমাদের সকলেরই আরও গভীরভাবে ভাবা দরকার, যেন সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যায়।
লেখক-
মো. ইব্রাহীম খলিল মোল্লা
Leave a Reply